Thursday, September 17, 2015

নামাজ

 
রাতে দুটো মুভি দেখা শেষ করে কানে হেডফোন লাগিয়ে শুয়ে শুয়ে ডাউনলোড করা নতুন গানগুলো শুনছে যায়ান। এমন সময় ফজরের আযান কানে ভেসে এলো। যায়ানদের বাসার খুব কাছেই মসজিদ। তাই কানে হেডফোন থাকা সত্ত্বেও আযানের সুর কানে এসে পৌঁছায়। কান থেকে হেডফোন খুলে মোবাইলে সময় দেখলো যায়ান। ওমা! রাতটা এত দ্রুত ফুরিয়ে গেলো? নাহ! এবার ঘুমাতে যাওয়া উচিৎ।
 
গানগুলো শোনার সময় মাথায় কিছু কথা ঘোরাফেরা করছিলো যায়ানের। শুতে যাবার আগে কথাগুলো লিখে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিতে মন চাইলো।
 
কথাগুলো লিখে নিজের টাইমলাইনে পোস্ট করার পর নিউজফিডটা শেষবারের মত স্ক্রল করছিলো যায়ান। এমন সময় বন্ধু তালিকার একজন ওর সদ্য পোস্ট করা স্ট্যাটাসটিতে একটা লাইক দিলো। ওর মতই জেগে ছিলো নাকি? যায়ান মনে মনে ভাবলো। বন্ধুটির সাথে এর আগে কখনো কথা হয়নি। আজ একটু কথা বলে দেখা যাক।
 
“আপনি ঘুম থেকে এত আর্লি ওঠেন?”
 
“নামাজ পড়তে উঠেছিলাম।”
 
“ও। তাহলে এখন আবার ঘুমাতে যাবেন?”
 
“হুম।”
 
“গুড মর্নিং, বাই দ্য ওয়ে।”
 
“শুভ সকাল।”
 
“আপনি ঘুম দিয়ে উঠলেন। আর আমি এখন ঘুমাতে যাবো।”
 
“ওমা! এখন? ইনসমনিয়া?”
 
“না, না, ইনসমনিয়া টাইপ কোনো সমস্যা নয়। এমনিতেই জেগে ছিলাম।”
 
“ও আচ্ছা। নামাজটা পড়ে নিন তাহলে।”
 
নামাজের কথা শুনে যায়ান লজ্জা পেয়ে যায়।
 
“আমি তো নামাজ পড়ি না।”
 
“কেন?”
 
“এমনিতেই পড়ি না।”
 
“আপনি ঈদের নামাজ পড়েন?”
 
কী ব্যাপার! যায়ান নামাজ পড়ার নিয়মকানুন জানে কিনা, তা পরখ করে দেখছে নাকি?
 
“হ্যাঁ, তা অবশ্য পড়ি।”
 
“ভাইয়া, আমি আপনার বয়সে অনেক ছোট হবো। তারপরও একটা কথা বলি, প্লিজ মাইন্ড করবেন না।”
 
“না, না, মাইন্ড করবো না। বলুন।”
 
“আপনি এখন নামাজটা পড়ে দেখুন। নামাজের ভেতর একটা ম্যাজিক্যাল ব্যাপার আছে। ইউ ক্যান ফিল ইট।”
 
“আমি জানি, নামাজ পড়লে হয়তো অনেক ভালো লাগবে!”
 
“ভালো লাগাটা শুধু একটু সময়ের জন্য না। পুরো দিনটার জন্য। মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগবে। প্লিজ?”
“ওকে, চেষ্টা করে দেখি।”
 
“থ্যাংক ইউ। থ্যাংকস আ লট।”
 
“আচ্ছা, নামাজ কাজা হয়ে যায়নি?” যায়ান শেষবারের মত এড়ানোর চেষ্টা করলো।
 
“না। এখন পড়লেও হবে।”
 
“ঠিক আছে। আজ যাই তাহলে, কেমন?”
 
“আচ্ছা। আল্লাহ হাফেজ।”
 
বলে তো ফেলেছে, এখন কী করবে? নামাজ নিয়ে কোনো ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নেয়াটা ঠিক হবে না। আচ্ছা, দেখাই যাক না। ওজুটা অন্তত করে আসা যাক।
 
ওজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ালো যায়ান। দেখতে দেখতে দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করাও হয়ে গেলো।
 
জায়নামাজ ভাঁজ করে বারান্দায় ভোরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এসে দাঁড়ালো যায়ান। সত্যিই আজকের দিনটা অন্যান্য দিনের চাইতে অন্যরকম লাগছে। নিজের ভেতর কীরকম যেন একটা প্রশান্তি বিরাজ করছে।
 
মেয়েটি আসলে ঠিকই বলেছে। এখন থেকে নামাজটা নিয়মিত পড়ার চেষ্টা করবে, শুতে গিয়ে ভাবে যায়ান। মেয়েটিকে মন থেকে একটা ধন্যবাদ দিতে খুব ইচ্ছে করছে। কীভাবে দেয়া যায়, তা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো সে।
 
 
রচনাকালঃ ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫

No comments:

Post a Comment