Saturday, October 24, 2015

প্রতিবেশী

 

** রহস্যপত্রিকায় প্রকাশের জন্য মনোনীত। **

 
 
রচনাকালঃ ২৪শে অক্টোবর, ২০১৫

Friday, October 9, 2015

লিফট সমাচার

 

এক.

নিচে যাবো। লিফটে নিচে যাবার কল বাটনে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করছি। লিফট আটে এসে থামলো। দরজা খোলার পর ঢুকতে গিয়ে দেখি ভেতরে মধ্যবয়স্ক একজন লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল গুতাচ্ছেন। মুখে কাঁচাপাকা দাড়ি। হুজুর টাইপ দাড়ি নয়। ফ্রেঞ্চ স্টাইলে ছাঁটা দাড়ি। দেখলে বোঝা যায়, নিয়মিত সেলুনে গিয়ে দাড়ির পরিচর্যা করান।
 
উনি ভেতর থেকে বের হচ্ছেন না। আমি ভাবলাম, উনি ওপরতলায় যাবেন।
 
“উপরে যাচ্ছেন?”
 
“লিফট তো উপরেই যাচ্ছে।” উনার উদাসী জবাব।
 
“আচ্ছা, ঠিক আছে।” আমি পেছনে সরে এলাম।
 
লিফট দশতলা ঘুরে আবার আটে এসে থামলো। দরজা খোলার ঠিক আগমুহূর্তে আমি দু’হাত দু’দিকে প্রসারিত করে ‘খুল যা সিম সিম’ টাইপ একটা ভঙ্গি করলাম। আশেপাশে কেউ না থাকলে যা আমি প্রায়শই করে থাকি। লিফটের দরজা খুলে গেলো। ভেতরে সেই মহাশয় এখনও দাঁড়িয়ে আছেন এবং আমার ‘খুল যা সিম সিম’ টাইপ ভঙ্গি দেখে ফেলেছেন। আমি ভীষণ অপ্রস্তুতবোধ করলাম। ভেবেছিলাম উনি দশতলায় নেমে গেছেন। লিফটের ভেতর খালি, কেউ নেই।
 
“কী ব্যাপার? আপনি দশতলায় নামেননি?”
 
“দশতলায় কেন নামবো? আমি তো নিচে যাবো।”
 
“তাহলে উপরে গেলেন কেন?” আমি বেশ অবাক হলাম।
 
“আমি নিচে যাবার জন্য সেই চারতলায় লিফটে উঠেছি। তারপর থেকে লিফট নিচে না গিয়ে শুধু উপরের দিকে উঠছে আর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে থামছে। দেখেন তো, সেই কতক্ষণ ধরে নিচে যেতে পারছি না। কারা যেন প্রতি তলাতেই লিফটের কল বাটনে চাপ দিয়ে রেখেছে।”
 
“আসলে এই বিল্ডিঙে কয়েকটা দুষ্টু বাচ্চা আছে। ওরা খেলার ছলে মজা করে প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে গিয়ে লিফটের কল বাটনে চাপ দিয়ে রাখে।”
 
এইটুকু বলেই আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। প্রচণ্ড জোরে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছি। হাসি আটকাতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো।
 
দুই.
বাসা বাড়ির লিফটগুলো মার্কেট কিংবা অফিসের লিফটগুলোর চাইতে আকারে অনেকটা ছোট হয়। ভেতরে যদিও আটজন ওঠার কথা লেখা থাকে, কিন্তু ছয়জন উঠলেই দম বন্ধ হয়ে আসে। এমনই আরেকদিনের কথা।
 
আমিসহ চারজন ওঠার পর একদম শেষ মুহূর্তে স্কুলড্রেস পরা এক পিচ্চিকে নিয়ে একজন ভদ্রমহিলা লিফটে উঠলেন। লিফট পরিপূর্ণ। গরমে হাঁসফাঁস লাগছে। এমন সময় মনে হলো, কে যেন বিনা শব্দে পরিবেশ দূষণ করেছেন।
 
আমরা সুশীল নাগরিক। এসব বাজে ব্যাপার নিয়ে কথা বলে অভদ্রতা করি না। তাই সবার মুখে কুলুপ আঁটা। তবে একজন আরেকজনের মুখের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তাদের চোখের ভাষাগুলো অনুবাদ করা গেলে হয়তো অনেকটা এমন হতো।
 
“কী করে পারলেন?”
 
“মোটেও না। পাবলিক প্লেসে আমি এসব করি না।”
 
“আপনি আমার দিকে ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? মেয়েরা লিফটে পাদ দেয় না। ওসব ছেলেদের কাজ! ছিঃ!”
 
“এ্যাই বেয়াদ্দপ ছোকরা। আমি কিছু করিনি। আমার দিকে তাকাবি না বলে দিচ্ছি!”
 
স্কুলের পিচ্চিটা তো আর এত কিছু বোঝে না। সে হঠাৎ মুখ ফসকে বলে বসলো, “আম্মু, কে জানি পাদ দিছে। হি হি হি!”
 
“এই চুপ! চুপ! দুষ্টু ছেলে কোথাকার। মারবো একটা।” ভদ্রমহিলা নিজের বাচ্চাকে সামলে নিয়ে নার্ভাস ভঙ্গিতে একটা হাসি দিলেন।
 
লিফট চারে আসতেই ভুঁড়িয়াল এক ভদ্রলোক নেমে গেলেন। দরজা খোলায় ভেতরের বাতাস বাইরে বের হলো, বাইরের বাতাস ভেতরে ঢুকলো। আহ, কী শান্তি!
 
এবার মেয়েটা আর বাচ্চাওয়ালী ভদ্রমহিলার মধ্যে চোখে চোখে কথা হচ্ছে।
 
“ওই ভুঁড়িয়াল ব্যাটাই মনে হয় আসল কালপ্রিট, তাই না?”
 
“হুম! আমারও তাই মনে হয়।”
 
মেয়েটা নেমে গেলো পাঁচে। বাকী রইলাম আমরা চারজন।
 
“আংকেল, পাদ পাদ খেলবেন?” বলে পিচ্চিটা মুখ দিয়ে পুত, পুত শব্দ করতে লাগলো।
 
“সরি ভাই। ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।”
 
“না, না, আমি কিছু মনে করিনি।”
 
“অন্তু, আজ বাসায় চলো। তারপর তোমাকে লিফটে অভদ্রতা করার জন্য উচিৎ শিক্ষা দিবো।”
 
“আহা, থাক না! বাচ্চা মানুষ!”
 
পিচ্চিকে নিয়ে ভদ্রমহিলা নেমে গেলেন সাতে। বাকী রইলাম আমরা দু’জন।
 
“বোধহয় ওই ময়লা ন্যাকড়াটা থেকে গন্ধ আসছে।” ইঙ্গিতে লিফটের কোণায় পড়ে থাকা ন্যাকড়াটা দেখালেন লিফটের অপর ব্যক্তি।
 
“হুম! তাহলে এখন আর আসছে না কেন?” লিফট খালি, তাই উনার দিকে এবার ভালোমত খেয়াল করার সুযোগ হলো। অসম্ভব শুকনা শরীরের একজন মানুষ। তার ওপর আশির দশকের হিন্দি সিনেমার নায়ক জিতেন্দ্রর মত চিপা মোঁচ (সরু গোঁফ) রেখেছেন।
 
লিফট আটে চলে এসেছে। দরজা খোলার পর আমি নেমে পড়লাম। দু’এক পা সামনে এগোতেই পেছন থেকে আওয়াজ এলো, পোঁ-ও-ও-ত। ঘুরে তাকিয়ে দেখলাম, জনাব জিতেন্দ্র সাহেব লিফটের দরজাটা দ্রুত বন্ধ করার জন্য প্রাণপণে >।< চিহ্ন সম্বলিত বাটনটা চেপে যাচ্ছেন।
 
 
রচনাকালঃ ৯ই অক্টোবর, ২০১৫