Tuesday, September 22, 2015

নেশা

 

এক.
 
“চল নেশা করি।”
 
“কী নেশা?” আরিফ কিছুটা আগ্রহ সহকারে জানতে চায়।
 
“গাঁজা, চরস, হেরোইন, বাবা, বোতল.. সব ধরণের আইটেমই পাওয়া যায়। তোর যেটা ভালো লাগবে, সেটা করবি। যাবি?”
 
“কখন যাবি?”
 
“সন্ধ্যার পর।”
 
“সন্ধ্যার পর হলে যেতে পারবো না, দোস্ত। বাবা মা দু’জনই তখন বাসায় থাকেন।”
 
“হাহ! তাদের এত সময় আছে নাকি তোর দিকে খেয়াল রাখার?”
 
“দেখ, আমার বাবা মা’কে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবি না।”
 
“আচ্ছা, আচ্ছা, বলবো না। এখন পাঁচশোটা টাকা ধার দে। সন্ধ্যায় লাগবে। আর যদি মত পাল্টাস, ফোন করে আমাকে জানাস।”
 
“মত পাল্টাবো না।” আরিফ পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে পাঁচশো টাকার একটা নোট সুজনের দিকে বাড়িয়ে ধরলো।
 
আরিফের দেয়া টাকাটা চার ভাঁজ করে জিন্সের ছোট পকেটে ঢুকিয়ে রাখে সুজন। বড়লোকের একমাত্র সন্তান আরিফ। ওকে খুশী রাখতে পারলে চাইলেই টাকা ধার পাওয়া যায়। সেই ধার আর কখনই পরিশোধ করার প্রয়োজন পড়ে না। শুধু এই একটা কারণেই আরিফের সঙ্গে বন্ধুত্বটা এখনও ধরে রেখেছে সুজন।
 
দুই.
আরিফ বাসায় ঢুকতেই বাবা মা’র গলার চড়া আওয়াজ ওর কানে ভেসে এলো।
 
“তোমার সাথে এভাবে আমার আর পোষাচ্ছে না।”
 
“তা পোষাবে কেন? তোমার তো এখন পুষিয়ে নেবার মত জায়গা অনেক।”
 
“একদম বাজে কথা বলবে না। আমি ওটা মিন করিনি।”
 
“তো কোনটা মিন করেছো?”
 
“থাক, ওসব নিয়ে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাধে। দু’দিন পর পর বিজনেস ট্রিপগুলোতে গিয়ে তুমি যে কী করো, তা আমার জানা হয়ে গেছে!”
 
“ক্ক-কী জানো তুমি?”
 
“তোমার আগের সেক্রেটারি শারমিন চাকরী ছেড়ে চলে যাবার সময় আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দিয়ে গেছে।”
 
“শালী অকৃতজ্ঞ!” আরিফের বাবা তার সাবেক সেক্রেটারির উদ্দেশ্যে বাজে একটা গালি দেন।
 
“কনফারেন্সে যাবার নাম করে হোটেলের কামরায় নিয়ে তুমি ওর সর্বনাশ করোনি? এটা কীভাবে অস্বীকার করবে যে, তুমি ওর সম্ভ্রম নষ্ট করেছো?”
 
স্ত্রীর কাছে সব প্রকাশ হয়ে পড়ায় রাগে আরিফের বাবা তোতলাতে শুরু করেন।
 
পা টিপে টিপে বাড়ির বাইরে চলে আসে আরিফ। বাবা মা’র ঝগড়া আর শুনতে চাইছে না। নার্ভের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। প্রচণ্ড অস্থির লাগে। ইচ্ছে করে সব ভেঙে চুরমার করে দিতে। মরে যেতে ইচ্ছে হয়। মনের অস্থিরতা কাটাতে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সুজনকে ফোন দিলো আরিফ।
 
“হ্যালো। হ্যাঁ, আরিফ। বল।”
 
“কোথায় আসতে হবে?” আরিফ সরাসরি মূল কথায় চলে আসে।
 
“কেন? তুই যাবি আমাদের সাথে?”
 
“কোথায় আসতে হবে, সেটা বল।”
 
“তুই রহমান চাচার চায়ের দোকানে এসে বস। আমি তুহিন আর প্রিয়মকে সাথে নিয়ে ওখানে আসছি।”
 
“ওকে। আসছি আমি। বাই।”
 
“আর শোন। তুই গেলে আরও পাত্তি লাগবে। সঙ্গে আছে তো?”
 
“আছে।”
 
“গুড। তোর কাছে না থাকলে কী আর আমাদের কাছে থাকবে, বল? হাজার হোক, তুই বড়লোকের একমাত্র ছেলে।”
 
“রাখলাম। বাই।”
 
সুজনের এসব কথা শুনতে একেবারেই ভাল্লাগছে না আরিফের। তাই দ্রুত কথা শেষ করে কলটা কেটে দিলো।
 
আরিফ বড় রাস্তা ধরে রহমান চাচার চায়ের দোকানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সুজন, তুহিন, প্রিয়ম ওরা অনেক আগেই নষ্টের খাতায় নাম লিখিয়েছে। আজ আরিফেরও নষ্ট হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
 
আরিফ চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকায়। গোধূলি লগ্নে আকাশটা রক্তিম আকার ধারণ করেছে। আরিফের মনে হচ্ছে, ওর রক্তাত্ত হৃদয় থেকে চাপ চাপ রক্ত নিয়ে কেউ যেন আকাশটার গায়ে মাখিয়ে দিয়েছে। কাছের একটা মসজিদ থেকে মাগরিবের আযানের সুর কানে ভেসে এলো। আরিফ নিয়মিত নামাজ পড়লেও আজ ওর কানে যেন কিছুই ঢুকছে না।
 
আরিফ আজ নষ্টের খাতায় নাম লেখাবে। আজ ওর নষ্ট হয়ে যাবার দিন।
 
 
রচনাকালঃ ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫

No comments:

Post a Comment